মগজাস্ত্র প্রথম পর্ব

Date:

মগজাস্ত্র

প্রথম পর্ব

আরো একবার শহরের নাম করা ডিটেকটিভ মিঃ রামাইয়া নাইডুর শরণাপন্ন হয়েছে পুলিশডিপার্টমেন্ট,এইবারের কেসটা খুবই জটিল,নাকানিচুবানি খেয়ে যাচ্ছে দুঁদে পুলিশ অফিসারেরা,অগত্যা পুলিশের বড়কর্তা মিঃ নীলাদ্রি সেন নিজেই এসেছেন মিঃ নাইডুর বাড়িতে। “আপনাদের অফিসারেরা কি করে পুলিশের ট্রেনিং পাস করে বলুন তো মিঃ সেন!সামান্য একটা খুনের কেস সলভ করতে পারছে না!সেই আমার সাহায্য নিতে হচ্ছে?” একটু যেন বিদ্রুপের স্বরেই কথাগুলো বললেন মিঃ নাইডু,কিন্তু ওনার কথায় রাগ করলে চলবে না তাই নীলাদ্রি সেন ওনার কথাটা হেসেই উড়িয়ে দিয়ে বললেন, “আপনি হলেন অভিজ্ঞ মানুষ,জীবনে অনেক গুলো ক্রিটিক্যাল কেস সলভ করেছেন,সর্বোপরি আপনার মত বুদ্ধির ধার খুব কম মানুষেরই থাকে,তাই তো বিপদে পড়লেই আপনার শরণাপন্ন হতে দুবার ভাবি না মিঃ নাইডু,এবারের এই কেসটায় আপনার হেল্প লাগবেই স্যার,অনেক আশা নিয়ে এসেছি,খালি হাতে ফিরবো না আমি।” নীলাদ্রি সেন জানতেন এই বুড়ো নাইডু মুখে যাই বলুক,মনের দিক থেকে উনি কিন্তু একেবারে সাচ্চা আর জেনুইন মানুষ,হয়তো মুখের ভাষাটা ওনার একটু রুঢ় ঠিকই,কিন্তু মানুষটা খুবই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ধরেন তাই বিপদে পড়লে আসতেই হয় ওনার কাছে,আর এই কেসটা একটু অন্য ধরণের কেস,পুলিশ এখনো পর্যন্ত কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি,এমনকি যে সরু তার বা দড়ি দিয়ে খুনটা করা হয়েছে,সেটাও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি,কোথাও কোনো ফিঙ্গার প্রিন্টও পাওয়া যায়নি,তাই এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও খুনি অধরাই রয়ে গেছে!

মিঃ নাইডু কে নিয়ে নীলাদ্রি সেন সোজা গিয়ে পৌঁছালেন দক্ষিণ কলকাতার একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে,যেখানে ঘটেছিল এই ক্রাইম সিনটি,বাড়িটি সিল করে দেওয়া হয়েছিল বডি বের করে নিয়ে যাওয়ার পর।২৬ তলা এই বাড়িটির ১২ তলার একটি অফিসে হয়েছে খুনটা।এই অফিসের বস অনিমেষ চ্যাটার্জি খুন হয়েছেন নিজের চেম্বারের চেয়ারে বসেই। ক্রাইম সিনে পৌঁছে খুনের দিনের তোলা ছবিগুলো এক এক করে মিঃ নাইডু কে দেখালেন নীলাদ্রি সেন,খুব মন দিয়ে খুঁটিয়ে বিভিন্ন এ্যাঙ্গেল থেকে তোলা নিহত অনিমেষ চ্যাটার্জির ডেড বডির পোজিশন গুলো দেখছিলেন মিঃ নাইডু। চেয়ারে বসা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে মিঃ চ্যাটার্জির,টেবিলের ওপরে ছড়ানো ডান হাতের ওপরে একটু কাৎ অবস্থায় রাখা মৃতের মাথা,মৃতের গলায় সরু একটা দাগ,দেখলে মনে হচ্ছে কোনো সরু প্লাস্টিকের বা ধাতুর তার গলায় পেঁচিয়ে পেছন দিক থেকে টান দিয়ে ওনার শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে,চোখ দুটো ঠেলে বেরিয়ে এসেছে বাইরে,বাঁ হাতটা গলার কাছে।ছড়ানো ডান হাতটির কাছে একটা কলম পড়ে রয়েছে,দেখে মনে হচ্ছে,যে সময় খুনি পেছন থেকে ওনার গলায় ফাঁস দিয়ে টানছিল,সেই সময় উনি হয়তো হাতে কলম নিয়ে কিছু লিখছিলেন বা ওনাকে কিছু লিখতে বাধ্য করা হয়েছিল,কারণ ওনার সামনে কোনো পেপার বা ফাইল কিছুই পাওয়া যায়নি!

মৃত ব্যক্তির ডান হাতের সামনেই রাখা ছিল একটি টেবিল ক্যালেন্ডার আর সেই ক্যালেন্ডারের পাতায় কয়েকটি জায়গার তারিখের ওপর খুব অগোছালো ভাবে গোল পাকানো বা মার্ক করা,কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে ওই দাগগুলো টানার সময় বা গোল পাকানোর সময় সেই ব্যক্তি ছিলেন খুবই তাড়াহুড়োয় বা ছিলেন খুবই অসাবধানি,কারণ দাগগুলো খুব পরিষ্কার ভাবে দেওয়া নেই! খুনি খুবই চালাক,তাই সিসি ক্যামেরার ওপর সে টেপ আটকে ক্যামেরার লেন্স কে ঢাকা দিয়ে রেখেছিল তাই এই খুনের দৃশ্যের কোনো রেকর্ডিং হয়নি,কিছু সময়ের জন্য ওই বিশেষ ক্যামেরাটির ভিশন কালো হয়ে গিয়েছিল!দেখতে গেলে কোনো ক্লুই খুনি রেখে যায়নি আর দারোয়ান কোনো অচেনা ব্যক্তিকে ওই বিল্ডিংয়ে ঢুকতে বা বেরোতেও দেখেনি,বা সিসিটিভি ফুটেজও কোনো অস্বাভাবিক কিছুই দেখতে পাওয়া যায়নি!

এখন কথা হলো,তাহলে খুনটা করলো কে?যে খুন করেছে সে খুবই পরিচিত লোক এবং খুব সম্ভবতঃ সে এই অফিসেই চাকরি করে,তাই কোনো অচেনা লোককে বেরোতে বা ঢুকতে দেখা যায়নি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে! টেবিলের ডেট ক্যালেন্ডারটি তুলে নিয়ে খুব মন দিয়ে ওই মার্ক করা ডেটগুলো দেখছিলেন মিঃ নাইডু, “বুঝলেন মিঃ সেন,সবকিছু খতিয়ে দেখে মনে হচ্ছে,এই তারিখগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে কোনো ক্লু,আমি ছবি তুলে নিচ্ছি এই ক্যালেন্ডারের।” “বলেন কী মিঃ নাইডু!ওই ডেট গুলির মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই খুনের কোনো ক্লু?এটা তো আমাদের কারোর মাথায় আসেনি আগে!যদি আপনার এই অনুমান সঠিক হয় তাহলে মানতেই হবে আপনি সত্যিই একজন জিনিয়াস!” মিঃ নাইডু ক্যালেন্ডারের ছবি তুলে নিলেন আর নাম্বারগুলো নিজের ডাইরীতে নোটও করে নিলেন — 3,4,11,10,6 নীলাদ্রি সেন ওই নাম্বারের মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলেন না কিন্তু ওই নাম্বার গুলোর দিকে তাকিয়ে মিঃ নাইডুর চোখে দেখা গেল এক অদ্ভুত চমক!

লেখনী_স্নিগ্ধা_চক্রবর্তী

কলকাতা , ভারত

The Sailor
The Sailorhttps://www.thesailor.us/
“ The Sailor Magazine ” একটি অরাজনৈতিক এবং অসম্প্রদায়িক ম্যাগাজিন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশী ভাই বোনদের কথা বলা এবং আমরা যারা বাংলাদেশে মাতৃভূমিতে বসবাস করছি সকলের মধ্যে সমন্বয় হিসেবে আমরা আছি সবসময়, দেশ-বিদেশের খবরা-খবর সকল বিষয়ে পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করাই আমাদের লক্ষ্য।

2 COMMENTS

  1. আমার লেখা এই গোয়েন্দা গল্পটি এই পত্রিকায় স্থান পাওয়ায় আমি বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই মোহাম্মদ সোহেল রানা ভাইকে… 💐💐🙏🙏

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

Subscribe

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

পল আলেকজান্দ্রার

লোহার তৈরি ফুসফুসে বেচে ছিলেন ৭০ বছর , নাম...

রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে

আজ সোমবার বাংলাদেশের আকাশে রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে...

বিল্লাল হোসেন রাজু

জীবনের প্রথম চাকরি অফিস সহকারী পদে ২০১২ সালে। তারপর...

ছোটবেলায় ভাবতাম রোজা রেখে ইফতারে রুহ্ আফজা না খেলে রোজা হবে না।

ছোটবেলায় ভাবতাম রোজা রেখে ইফতারে রুহ্ আফজা না খেলে...